বাংলাদেশের আরেকটি টি ২০ সিরিজ জয়

প্রকাশিত: ৭:৫৮ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ৯, ২০২১
শেয়ার করুনঃ

বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান কয়েকবার প্রেসিডেন্ট বক্সের বাইরে এসে পায়চারি করলেন। প্রেসবক্সে তখন আলোচনা চলছে, টি ২০ ক্রিকেটেও এমন দিন এলো যে, হিসাব কষতে হচ্ছে ৯৪ রান তাড়া করে দল জিতবে কিনা!

মাহমুদুল্লাহ যেন সেই প্রাচীন নাবিক, উত্তাল সাগর পেরিয়ে জাহাজ জয়ের বন্দরে ভেড়ানো যার পেশাগত অভ্যাস। বুধবার মিরপুরের স্পিন ফাঁদে আবারও নিজেরা ধরা পড়ার শঙ্কা জাগলেও ধৈর্যের ভেলায় চড়ে যোগ্য অধিনায়কের মতোই দলকে জয়ের স্বস্তি এনে দিলেন মাহমুদউল্লাহ।

শেষ ওভারের প্রথম বলে মিড উইকেট দিয়ে তার অসাধারণ বাউন্ডারিতে পাঁচ বল বাকি থাকতেই ছয় উইকেটের জয় নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের। প্রেসিডেন্ট বক্সের সামনে দাঁড়িয়ে বিসিবির সব পরিচালকই করতালি দিয়ে উদযাপন করেন ঐতিহাসিক মুহূর্তটি।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের টি ২০ সিরিজ জয়ের সাক্ষী হতে মাঠে ছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলও। এক ম্যাচ হাতে রেখে কিউইদের বিপক্ষে টি ২০ সিরিজ জেতায় বাংলাদেশ দলকে কাল অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পাঁচ ম্যাচের টি ২০ সিরিজে বাংলাদেশ এগিয়ে গেল ৩-১ ব্যবধানে। আগামীকাল একই ভেন্যুতে সিরিজের পঞ্চম ও শেষ ম্যাচ।

আগের ম্যাচে ৭৬ রানে অলআউট হওয়া বাংলাদেশের কাল ফিরেছে দারুণভাবে। ব্যাটিং দুরূহ উইকেটে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচের সুর বেঁধে দিয়েছিলেন বোলাররা। ম্যাচসেরা নাসুম আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমানের সমান চারটি করে উইকেটে তিন বল বাকি থাকতেই ৯৩ রানে গুটিয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

উত্তরে ৩২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে দল চাপে পড়ে গেলেও এবার অঘটন ঘটতে দেননি মাহমুদউল্লাহ। ৪৮ বলে এক চার ও দুই ছক্কায় ৪৩ রানের অপরাজিত ইনিংসে দলকে জিতিয়েই ফেরেন অধিনায়ক।

জিম্বাবুয়ে ও অস্ট্রেলিয়ার পর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও টি ২০ সিরিজ জিতে তিনে তিন করল বাংলাদেশ। আগামীকালের শেষ ম্যাচটি তাই শুধুই নিয়মরক্ষার। বাংলাদেশের বিপক্ষে এ সিরিজের আগে টি ২০-তে কোনো হার ছিল না কিউইদের।

তরুণ দল নিয়ে আসা নিউজিল্যান্ড এ সফরে দেখল মুদ্রার উলটো পিঠ। তাদের সর্বনিম্ন ৬০ রানে অলআউট হওয়ার রেকর্ড এখন বাংলাদেশের বিপক্ষেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয়বার তারা একশর নিচে অলআউট হলো কাল।

ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা আশাজাগানিয়া হলেও ধস নামতে সময় লাগেনি। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের মধ্যে নাঈম ছাড়া কেউই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। এজাজ প্যাটেল ও কোল ম্যাককনকিকে মারার চেষ্টায় আউট হয়ে ফেরেন লিটন, সাকিব ও মুশফিক।

তবে চতুর্থ উইকেটে নাঈমকে নিয়ে ৩৪ এবং পঞ্চম উইকেটে আফিফকে নিয়ে মাহমুদউল্লাহর অবিচ্ছিন্ন ২৯ রানের জুটিতে পাঁচ বল বাকি থাকতেই লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ।

যদিও মাহমুদউল্লাহর ২৫ রানের সময় টম ল্যাথাম স্টাম্পিংয়ের সুযোগ হাতছাড়া না করলে ফল অন্য রকমও হতে পারত। শেষ তিন ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ১৯ রান।

১৮তম ওভারে আট ও ১৯তম ওভারে এক ছক্কায় আসে নয় রান। শেষ ওভারে দুই রানের লক্ষ্যে প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহর বাউন্ডারিতে জয় নিশ্চিত হয় স্বাগতিকদের।

৩৫ বলের মধ্যে ১৭ বল ডট দিলেও ২৯ রান করে নাঈম দারুণ পার্শ্ব চরিত্রের ভূমিকা পালন করেছেন। আগের ম্যাচে ৭৬ রানে অলআউট হওয়ার ক্ষতে প্রলেপ দিতে বোলিংয়ে ভালো করার বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের।

প্রথম ওভারেই নাসুম মেডেনসহ তুলে নিলেন রাচিন রবীন্দ্রর উইকেট। শেষ পর্যন্ত নাসুমের বোলিং ফিগার চার ওভারে দুই মেডেনসহ ১০ রানে চার উইকেট। এটাই তার ক্যারিয়ারসেরা বোলিং।

আগের সেরা ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ১৯ রানে চার উইকেট। দারুণ বোলিংয়ে নাসুমের সঙ্গে চার উইকেট তুলে নেন মোস্তাফিজুর রহমানও। ৩.৩ ওভারে তিনি দেন ১২ রান।

চার উইকেট পাওয়া নাসুমের হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু পারেননি। তবে শেষ দুই বলে দুটি উইকেট নিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা বাঁচিয়ে রেখেছেন মোস্তাফিজ।

নিজের পরের ম্যাচের প্রথম বলে উইকেট পেলেই হয়ে যাবে হ্যাটট্রিক। নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় জুটি হয় টম ল্যাথাম ও উইল ইয়াংয়ের মধ্যে তৃতীয় উইকেটে (৩৫)।

এই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান, ১১তম ওভারে। পরের ওভারেই জোড়া আঘাত হানেন নাসুম। পরপর দুই বলে হেনরি নিকোলস ও কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমকে ফিরিয়ে দেন তিনি।

৫২ রানে পাঁচ উইকেট হারানোর পরও সফরকারীররা ৯৩ রান করতে পেরেছে ইয়াংয়ের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে। তার ৪৮ বলে ৪৬ রানের ইনিংসে ছিল পাঁচটি চার ও একটি ছয়। (স্কোর কার্ড খেলার পাতায়)