“ডেঙ্গু জ্বর ছোটদের জন্যও মারাত্মক” ডাঃ ফারহানা মোবিন
বিবা নিউজ ডেস্ক বিবা নিউজ ডেস্ক
সারা বিশ্বের প্রতিচ্ছবি
ছোটদেরও ডেঙ্গু জ্বর হয়।
ডেঙ্গু জ্বর ছোট বড় সবার জন্য হুমকি স্বরূপ। ডেঙ্গু জ্বর এক ধরনের ভাইরাস জনিত জ্বর।
এই জ্বর এডিস এজেপটি নামক এক ধরনের স্ত্রী মশার কামড়ে হয়। এটি এক প্রকার ভাইরাস জনিত জ্বর।
একজন রোগী থেকে অন্য রোগীতে এই জ্বর সংক্রামিত হয়না। প্রতি বছর বরষার মৌসুমে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশী দেখা যায় । এইবার শিশুরাও অনেক বেশী পরিমাণে আক্রান্ত গত বছরের তুলনায়।
বড়োদের সাথে শিশু রোগীর পরিমাণও বেড়েই চলেছে।
শিশু ও বড়দের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বরের কিছু উপসর্গ থাকে একই রকম ।
যেমন:- ১) জ্বর ১০১ থেকে ১০৫ পর্যন্ত উর্যন্ত উঠে যেতে পারে। জ্বর সাধারণত এক সপ্তাহের বেশী স্থায়ী হতে পারে। আবার সব সময় উচ্চমাত্রার জ্বর নাও থাকতে পারে। জ্বর ভালো হবার পর থেকে ব্রণের মতো লালচে র্যাশ বের হতে পারে। র্যাশ অনেকের শরীরে ঘামাচি দানার মতোও হয়।
এই বছর রোগীদের শরীরে ঘামাচির মতো লালচে দানা গতবারের তুলনায় কম।
২। খাবারে অরুচি, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, অ্যাসিডিটিও থাকতে পারে।
অনেকের বমির পরিমাণ বেশী হয়। খাবারে গন্ধ লাগে।
৩। পুরো দেহের হাড়ে বা জয়েন্টে জয়েন্টে ভয়ানক ব্যথা হয়। এই জ্বরের আরো একটি নাম হলো ব্রেক বোন ফিভার ( Break bone fever)।
হাড় ভেঙ্গে যাবার মতো সারা শরীরে ব্যথা হয়।
৪। রোগীর খুব দূর্বল লাগে। পানি শূন্যতা হতে পারে।
৫। ডেঙ্গু জ্বর ভয়ানক খারাপ পর্যায়ে চলে গেলে ব্লাড প্রেশার দ্রুত কমতে থাকে। রোগী শকে পর্যন্ত চলে যায়।
হৃৎপিন্ড, লিভার, কিডনী ফেইলর হয়ে রোগী মারাও যায়। ডেঙ্গু জ্বরের এই খারাপ অবস্থাকে বলে “ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।”
এই অবস্থায় রক্তপাতও হয়। নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়া, মলের সাথে রক্ত, বমির সাথে রক্ত যেতে পারে।
৬। এই জ্বরে প্লেটিলেট (রক্তের জরুরী অংগ) দ্রুত কমে যায়। দেহের লবণ পানির অসামঞ্জস্য ঘটে। হৃৎপিন্ড দ্রুত উঠানামা করে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের করণীয় ঃ
১। ডেঙ্গু জ্বরের জন্য অপরাধী হলো এডিস মশা। এই মশা নোংরা পানি তে বাসা বাধে। তাই পুরানো যেসব জিনিসে পানি জমতে পারে, যেমন ফুলদানী, ফুলের টব, এসি ফ্রিজের পেছনের অংশ, বাথরুমে বালতি বা হাড়িতে, কমোডের আশে পাশের কোনাতে যেন পানি জমে না থাকে, সেই চেষ্টা করতে হবে। এই জমে থাকা পানিতে ডেঙ্গু মশা বাসা বাধে।
গাড়ীর যন্ত্রপাতিও খেয়াল রাখতে হবে। ময়লা পানি জমে থাকতে পারে। শিশুদের খেলনার মধ্যে যেন পানি জমে না থাকে।
২। বাসার চারিপাশে মশাবিরোধী নেট, ঘরের কোণাতে মশানিরোধক যন্ত্র ব্যবহার করবেন। জানালার কার্ণিশে অনেক সময় ময়লা ভাঙ্গাচোরা জিনিসে যেন পানি জমে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
৩। পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে। কমোডের আশেপাশের জায়গাগুলো পরিস্কার রাখতে হবে।
৪। শিশুর জ্বর এর মাত্রা কমানোর জন্য বার বার ভেজা কাপড় দিয়ে স্পঞ্জ করতে হবে।
তরল খাবার ফলের রস বেশী করে খেতে হবে। জ্বরের মাত্র বেশী হলে শিশুকে হাসপাতলে ভর্তি করতে হবে।
৫। প্লেটিলেটের মাত্রা কতোটা কমে গেছে তা নির্ণয় করতে হবে ( সিবিসি / রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে)।
৬। দেহের কোথাও র্যাশ, ঘা হয়েছে কিনা, অবশ্যই খেয়াল রাখবেন।
৭। শিশুর নাক, মুখ, মল, বমি দিয়ে রক্ত যাচ্ছে কিনা, পর্যবেক্ষণ করবেন।
৮। অবস্থা খারাপ মনে হলে, শিশুকে বাসায় না রেখে, দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করান। অনেকসময় রক্তপাত হলে, রক্ত দিতে হয়।
তাই অবস্থা আশঙ্কাজনক হবার পূর্বেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ছোট বা বড় কারো ক্ষেত্রেই ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার করা যাবেনা।
প্যারাসিট্যামল ব্যবহার করা নিরাপদ।
ডা: ফারহানা মোবিন