মহামারির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ও বাংলাদেশ বাস্তবতা। শামসুর রাহমান সাইমুন। এম,এ লোকপ্রশাসন বিভাগ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।।
বিবা নিউজ ডেস্ক বিবা নিউজ ডেস্ক
সারা বিশ্বের প্রতিচ্ছবি

ইলুমিনাটি তথা যারা কৌশলগতভাবে গরীব ও সাধারণ মানুষের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নিজেদের আধিপত্যের বিস্তার ঘটায়, তারাও আজ এক অদৃশ্য ক্ষমতার (করোনা) ধ্বংসযজ্ঞে পুরোপুরি বিপর্যস্ত।
সাহারা মরুভূমি এবং তার আশপাশের প্রায় ৫০ টি দেশের মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল ‘এইচআইভি এইডস’ যা পৃথিবীতে মানুষের গড় আয়ু ১০ বছর পর্যন্ত কমিয়ে দিয়েছিল। যা সমগ্র বিশ্বকে আতঙ্কিত করে তুলেছিল কারণ এ রোগের কোন নির্ভরযোগ্য সমাধান গবেষকরা এখন পর্যন্ত খুঁজে পাননি। যদিও মার্কিন গবেষকরা দাবি করছেন তারা ‘ট্রুভাডা’ নামক একটি মেডিসিন ডেভেলপ করতে সক্ষম হয়েছেন যা এইচআইভি সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখবে কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোন নির্ভরযোগ্য প্রমাণ মেলেনি।
ইতিহাসবিদদের মতে, পৃথিবী আজ অবধি যতগুলো প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে তার মধ্যে সর্বোচ্ছ সংখ্যক মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ১ম বিশ্বযুদ্ধ। কারণ যুদ্ধের বিভীষিকাকে তীব্রতর করে তুলেছিল প্রাণঘাতী ‘স্প্যানীশ ফ্লু’।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আজ পর্যন্ত পৃথিবী যতগুলো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় হচ্ছে নোবেল করোনা ভাইরাসের ভয়ানক থাবা যা আমাদেরকে একটা নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে পরিচয় করিয়ে দেবার পথেই অগ্রসর হচ্ছে। যেমন, মাত্র ২ মাস আগেও যেখানে হোয়াইট হাউস, পেন্টাগন, ক্রেমলিনের চিরাচরিত ভাবনা ছিল কিভাবে বিশ্ব অর্থনীতি ও রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তার করা যায় কিন্তু বর্তমানে তারা ভাবছেন কিভাবে নিজেদেরকে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যায়, কিভাবে অর্থনীতিকে ভেঙ্গে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
বাংলাদেশ প্রসঙ্গ:
যেহেতু করোনার মতো মহামারীর কোন ভ্যাকসিন পৃথিবীতে আজ অবধি ডেভেলপ করা সম্ভব হয়নি তাই সংক্রমণ ঠেকানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে লকডাউন,কোয়ারান্টাইন, হোম কোয়ারান্টাইন, আইসোলেসন ইত্যাদি ইত্যাদি। যদিও লকডাউন আমাদের মত তৃতীয় বিশ্বের ‘বি’ ক্যাটাগরির দেশের জন্য খুব একটা সমীচীন না। কারণ আমাদের অর্থ ও চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত বিশ্বের তুলনায় যোজন যোজন পিছিয়ে। তবুও এটা ছাড়া বিকল্প কোন উপায়ও নেই।
আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় একতৃতীয়াংশই অর্থাৎ প্রায় ৬ কোটি মানুষই দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। সহজ কথায় বললে তারা দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ। যাদের পক্ষে ঘরে বসে খেয়ে বাঁচাটা নিতান্তই অসম্ভব।
ধরুন, এই ৬ কোটি মানুষের প্রত্যেককে প্রতিদিন ১০০ টাকা মূল্যের খাবার সরবরাহ করা হবে। তাহলে প্রতিদিন আপনাকে ৬০০ কোটি টাকা গুনতে হবে। ১৫ দিন করলে ৯০০০ কোটি টাকা আর তা ১ মাস হলে ব্যয় হবে ১৮০০০ কোটি টাকা। যা আমাদের মতো ক্ষুদ্র অর্থনীতির দেশে আদৌ সম্ভব কি-না তা আমার বোধগম্য না। যদিও সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চলমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য।
করোনা মোকাবেলায় গৃহীত পদক্ষেপ সমূহ :
১। ত্রাণ বিতরণ : সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের গৃহীত ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি সত্যিই প্রশংসনীয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো স্থানীয় পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে কিছু এলাকায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাই ত্রাণ বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সামরিক বাহিনী দ্বারা এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা উচিত। কারণ লকডাউনের সুফল পেতে হলে ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরী
২। প্রশাসনিক তৎপরতা : সাধারণ মানুষকে নিরাপদ রাখতে প্রশাসন জীবনের ঝুঁকি নিয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে যা প্রশংসার দাবী রাখে। লকডাউনকে ফলপ্রসূ করে তুলতে এই তৎপরতা অব্যাহত রাখা জরুরী।
৩।পর্যাপ্ত বেডের ব্যবস্থা: করোনা আক্রান্ত রোগীকে জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া কতোটা যৌক্তিক তা আমার বোধগম্য না। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশেষায়িত হাসপাতাল দরকার। চীনের মতো ১০ দিনে হাসপাতাল নির্মাণ করা সম্ভব না।
সেটাও সমস্যা না। সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন আবাসিক হোটেল গুলোকে সাময়িকভাবে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা যায়। কারণ সবগুলো আবাসিক হোটেলই এখন ফাঁকা।
সর্বোপরি এ কথা মাথায় রাখতে হবে আমাদের সম্পদ মীমিত। আমাদের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা দেওয়া সরকারের একা কখনোই সম্ভব না কারণ এই পরিস্থিতি সামলাতে রীতিমতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশ তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও হিমশিম খাচ্ছে।
সুতরাং এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার এবং প্রশাসনকে সহায়তা করুন। সরকার ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রদত্ত নিয়মকানুন মেনে চলুন।
ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন।